“রাঙ্গামাটি” প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি
“রাঙ্গামাটি” প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপার লীলাভূমি। এখানকার লেক, ঝরনা, বিস্তির্ন নীল আকাশ, পাহাড় সর্বপরি আদিবাসি মানুষের সাধারন সহজ-সরল জীবন আপনাকে বিমহিত করবে।
রাঙ্গামাটিতে ভ্রমন করার জন্য রয়েছে অনেকগুলো দর্শনীয় স্থান। এর মধ্যে কাপ্তাই লেক, পর্যটন মোটেল, ডিসি বাংলো, ঝুলন্ত ব্রিজ, পেদা টিংটিং, সুবলং ঝর্না, রাজবাড়ি, রাজবন বিহার, উপজাতীয় জাদুঘর, কাপ্তাই হাইড্রো ইলেক্ট্রিক প্রজেক্ট, কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।
এখানে যেদিকে তাকাবেন নজরে পড়বে কেবল পাহাড় আর কাপ্তাই লেকের পানি। বিশাল কাপ্তাই লেকের পুরোটাই যেন অপার মমতায় দুহাত দিয়ে ধরে রেখেছে পাহাড়গুলি। আকাশের মেঘ আর তার নীলাভ আভা খেলা করে লেকের জলে, দূরে পাহাড়ের আড়ালে হারিয়ে যায়, আবার যেন উকি দিয়ে দেখে নেয়, কেমন আছে লেক।
দেশীয় ইঞ্জিন নৌকা,লঞ্চ, স্পিডবোটে দিনভর নৌবিহার করা যেতে পারে। মজার ব্যাপার হলো আপনি চাইলে এই হ্রদ ঘুরতে ঘুরতেই দেখে ফেলতে পারবেন রাঙ্গামাটির অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলো।
রাঙ্গামাটি শহরের বিভিন্ন জায়গা থেকে আপনি ট্রলার বা বোট ভাড়া করতে পারবেন। পর্যটন থেকেও বোট ভাড়া করা যায়, তবে রেট একটু বেশি। রিজার্ভ বাজার থেকে বোট বা ট্রলার ভাড়া করলে একটু কম দামে পাওয়া যাবে। তবে পর্যটনের বোট বা ট্রলারের মতো দেখতে সুন্দর না বলে অনেকে সেগুলো ভাড়া নিতে চান না।
কাপ্তাই হ্রদ ভ্রমনের জন্য একটু ভোরে ভোরে রওয়ানা হওয়াই উত্তম। হ্রদের মাঝখান দিয়ে নৌভ্রমন আপনার মনে এমনই এক সুখস্মৃতি তৈরি করবে যা আপনি কখনোই ভূলতে পারবেন না। যে দিকে তাকাবেন কেবল পানি আর তার মাঝে মাঝে ছোট ছোট টিলা। লাল মাটির টিলাগুলোর গাঁয়ে সবুজের সমারোহ, যেন এগুলো ঢেকে আছে সবুজ কার্পেটে।
অসহ্য সুন্দর যে দৃশ্য। কখনো ডানে কখনো বামে আবার কখনো বা মনে হবে সম্মুখে সীমাহীন পথ। এখানে জল, পাহাড় আর আপনি ছাড়া আর কিছুই নেই চারিদিকে। এ এক অসাধারন অনুভুতি। কখনো কখনো বেশ বড় বড় পাহাড় আপনার চোখে পড়বে। এর দৃষ্টিনন্দন শীলা খন্ড আপনার নজর কাড়বেই। মন চাইবে উড়াল দিয়ে চলে যাই সেখানে। চাইলে অবশ্য যেতেও পারেন। একটু কষ্টসাধ্য- এই আর কি।
রাঙ্গামাটি শহরের শেষ প্রান্তে কাপ্তাই হ্রদের তীর ঘেঁষে অবস্থিত সরকরি পর্যটন মোটেল। পর্যটকদের জন্য খুবই দৃষ্টিকাড়া ও আকর্ষনীয় স্থান এটি। পর্যটন মোটেলেই অবস্থিত ঝুলন্ত ব্রিজটি, যা পর্যটন এলাকাকে আরও বেশি সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দিত করেছে। সহজেই পর্যটকদের দৃষ্টি কাড়ে এটি। পর্যটকদের প্রধান আকর্ষনের কারনে এবং এর নির্মানশৈলির কারনে ঝুলন্ত ব্রিজ আজ রাঙ্গামাটির নিদর্শন হয়ে দাড়িয়ে আছে।
পর্যটকরা সাধারণত প্রথমেই এই পর্যটন মোটেল এবং ঝুলন্ত ব্রিজে আসে। এখান থেকে শুরু হয় রাঙামাটি ভ্রমণ। এখানে পর্যটনের বোট ভাড়া পাওয়া যায়। এই বোট ভাড়া নিয়ে কাপ্তাই হ্রদে ভ্রমণ করতে করতে যাওয়া যায় সুভলং, পেদা টিং টিং, টুকটুক ইকো ভিলেজ, চাং পাং, বৌদ্ধ মন্দির, কাপ্তাই শহর সহ নানা জায়গায়। এক দিনে সব জায়গায় যাওয়া সম্ভব নয়। সন জায়গায় ঘুরতে চাইলে রাঙামাটিতে থাকতে হবে ২/৩ দিন।
এখানকার জায়গাগুলো বছরের বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপে সাজে। তবে বর্ষার সাজ একেবারেই অন্যরূপ। তাই শুধু শীতকাল নয় বর্ষা ঋতুতেও ঘুরে আসতে পারেন রাঙ্গামাটি থেকে।
রাঙ্গামাটি ভ্রমণে সবার আগে দেখা উচিৎ জেলা শহরের উপজাতীয় জাদুঘর। পুরো জেলার কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ইতিহাস সম্পর্কে পরিপূর্ণ ধারণা মিলবে জাদুঘর থেকে। এটি খোলা থাকে সোম থেকে শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত। শনি, রবি ও অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনগুলোতে জাদুঘর বন্ধ থাকে।
উপজাতীয় জাদুঘর থেকে কাছেই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থ স্থান রাজবনবিহার। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের নানান আচার অনুষ্ঠান দেখতে পাবেন এখানে। রাজবনবিহারের পাশেই কাপ্তাই লেকের ছোট্ট একটি দীপ জুড়ে রয়েছে চাকমা রাজার বাড়ি। নৌকায় লেক পাড়ি দিয়ে সেখানে যাওয়া যায়। রাজবাড়ির আঙিনায় পর্যটকদের যেতে বাঁধা নেই।
রাঙ্গামাটি শহরের একেবারে শেষ প্রান্তে, একপাশে রিজার্ভ বাজার আর তবলছড়ি বাজার। এ দুটি বাজারেই মূলত ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠীর মানুষের আনাগোনা বেশি থাকে।
সারাদিনের জন্য একটি নৌকা ভাড়া করে সকালে চলে যাওয়া যায় শুভলং বাজার। শুভলং যাওয়ার পথেই হাতের বাঁয়ে শুভলং ঝরণা। বর্ষাকালে এ ঝরণা প্রাণ ফিরে পায়।
শুভলং যাওয়ার পথে কাপ্তাই লেকের মাঝে ছোট ছোট দ্বীপ জুড়ে আছে টুক টুক ইকো ভিলেজ ও পেদা টিংটিং। এখাকার রেস্তোরাঁয় পাওয়া যায় বিভিন্ন রকম পাহাড়ি খাবার।
তবলছড়ি কিংবা রিজার্ভ বাজার থেকে সারাদিন ভ্রমণের জন্য একটি ইঞ্জিন নৌকার ভাড়া পড়বে দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা। নিজস্ব গাড়ির ব্যবস্থা থাকলে বেড়াতে পারেন রাঙ্গামাটি কাপ্তাই সংযোগ সড়কে। পাহাড়ি আঁকাবাঁকা পথে চলতে ভালোই লাগবে। এ পথ ধরে কাপ্তাই হয়ে চট্টগ্রাম ফেরার পথে দেখে নিতে পারেন কাপ্তাই জাতীয় উদ্যান।
কীভাবে যাবেন
ঢাকা থেকে সরাসরি রাঙ্গমাটি যায় এমন বাসের সংখ্যা অনেক। রাতে উঠলে সকাল ৭টা-৮টার মধ্যেই পৌছে যায়া যাবে।
কোথায় থাকবেন
রাঙ্গামাটি ভ্রমণে থাকার জন্য সবচেয়ে ভালো পর্যটন মোটেল।ঢাকার মহাখালীতে পর্যটন করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় থেকেও এ মোটেলের বুকিং দেওয়া যায়।এছাড়ার রাঙ্গামাটি শহরের অন্যান্য সাধারণ মানের হোটেল হল রয়েছে। এসব হোটেলে সল্প খরচে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে।আপনার সুবিধা অনুযায়ী বেছে নিতে পারেন।
Post a Comment
Thenks for your comments.