Halloween Costume ideas 2015

Behiond The Seen of Bangladesh

হযরত খান জাহান আলী (র.)

হযরত খান জাহান আলী (র.)

Photo
মুকুটহীন সম্রাট হযরত খান জাহান আলী (র.)
    পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে খানজাহান আলী (র.) স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি সততা, সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক দক্ষতা দিয়ে দীর্ঘদিন যশোরে তাঁর শাসন কায়েম রেখেছিলেন। ইসলামের সমস্ত বৈরী শক্তির মোকাবেলায় ঝড়ের বেগে অগ্রসর হয়ে  যুদ্ধ করে জয়ী হয়েছেন, মুসলিম ধর্মের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করেছেন এবং জনহিতকর কার্যে সারাজীবন অতিবাহিত করেছিলেন। ইসলাম প্রচার, ইসলামী ভাবধারার প্রচলন ও ইসলামী সমাজবিধি প্রচলনে তিনি ছিলেন অন্যতম পথিক। তিনি নিজে ইসলাম প্রচার করার সাথে সাথে বিভিন্ন শিষ্য-সাগরিদদেরকে বিভিন্ন স্থানে ইসলাম প্রচারের জন্যে প্রেরণ করতেন। তাঁর সংগঠন ক্ষমতা, জনসেবা ও অকৃত্রিম চরিত্র মাধুর্যে বিমোহিত হয়ে অমুসলিম সম্প্রদায়গুলো দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতো।
    তাঁর পূর্বপুরুষেরা বাগদাদের অধিবাসী ছিল বলে জানা যায়। হযরত খান জাহান আলী (র.) পিতার নাম ছিল আজর খান বা ফরিদ খান। মায়ের নাম ছিল আমিনা বিবি। তাঁরা হযরত বড়পীর (র.) এর বংশধর ছিলেন। হযরত খান জাহান আলীর মূল নাম ছিল শের খান, কিশওয়ার বা কেশর খান। হালাকু খান বাগদাদ আক্রমণ করলে আজর খান তাঁর পরিবার নিয়ে দিল্লী চলে আসেন। দিল্লীতে স্বল্পকালীন অবস্থানের পর গৌড়েও কিছুদিন বসবাস করেন।
    আজর খান শিক্ষিত লোক ছিলেন বলে গৌড়ের রাজপরিবারে সহজেই গৃহশিক্ষকের চাকরী লাভ করেন। তিনি শের খানকে গৌড়ের সুফী সাধক এবং বুযুর্গ হযরত নূর-ই-কুতুব-উল আলমের নিকট বায়েত হন। পিতা আজর খানের মৃত্যুর পর কেশর খান শিক্ষাজীবনের ওস্তাদ ও আধ্যাত্মিক নেতা হযরত নূর-ই-কুতুব-উল আলমের শরণাপন্ন হলে তিনি জৌনপুরের সুলতান ইব্যাহীম শর্কীর কাছে প্রেরণ করলে কেশর খানকে সাধারণ সৈনিক হিসেবে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ দেন। যোগ্যতা ও প্রতিভাবলে অল্পদিনের মধ্যেই তিনি সেনাপ্রধান হিসাবে নিয়োগ পান। ১৪০০-১৪১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্য দিনাজপুরের রাজা গণেশ গৌড়ের সুলতান সাইফুদ্দিন হামযা শাহকে পরাজিত করে নিজেকে স্বাধীন রাজা হিসাবে ঘোষণা করেন। সাথে সাথে তিনি মুসলিম নিধনযজ্ঞ চালাতে থাকেন। হযরত নূর-ই-কুতুব-উল আলম সুলতান ইব্রাহীম শর্কীকে রাজা গণেশের কার্যকলাপের খবর অবহিত করে তার অত্যাচার থেকে মুসলমানদের রক্ষার অনুরোধ জানিয়ে চিঠি লিখলেন। কেশর খানের নেতৃত্বে সুলতান শর্কীর সেনাবাহিনী অতি সহে জই রাজা গণেশকে পরাজিত করলো। চতুর রাজা সুলতানের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে চিঠি লিখলো। রাজা গণেশের পুত্র যদু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে জালালউদ্দীন নাম ধারণ করে গৌড়ের শাসনভার গ্রহণ করলেন। কিন্তু রাজা গণেশ পুনরায় নিজ পুত্রের কাছ থেকে শাসনভার গ্রহণ করে মুসলমানদের উপর অত্যাচারের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। ফলে সুলতান হযরত নূর-ই-কুতুব-উল আলমের নির্দেশে রাজা গণেশকে উপযুক্ত শিক্ষা দেবার জন্য কেশর খানের নেতৃত্বে এক বিরাট সেনাবাহিনী গৌড়ের দিকে প্রেরণ করেন। এ সংবাদ শ্রবণে রাজা গণেশ দলবলসহ দিনাজপুরের দিকে পালিয়ে গেলে বিনাযুদ্ধে গৌড় অধিকার করেন। সুলতান ইব্রাহীম শর্কী কেশর খানের বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে খান-ই-জাহান উপাধি দেন। খান-ই-জাহান উপাধি থেকে বোঝা যায় তিনি প্রথম জীবনে কোন সুলতান বা রাজার মন্ত্রী বা সেনাপতি ছিলেন। এই খান-ই-জাহান নামের আড়ালে বীর সেনাপতির আসল নাম ঢাকা পড়ে যায়।
    ইব্রাহীম শর্কী এর পর তাঁকে দক্ষিণ বঙ্গে ইসলামী হুকুমাত কায়েম করার জন্য প্রেরণ করেন। প্রথমে তিনি বারোবাজারে আস্তানা গাড়েন। সে সময় বাে রাবাজার উন্নত ও নামকরা বন্দর ছিল। অনেকে অনুমান করেন যে, খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে গঙ্গারিডী রাজ্যের রাজধানী বারোবাজারে ছিল। হযরতের কারণেই এই রাজবংশের ইতি ঘটে বলে অনুমান করা হয়। আজো বারোবাজারে প্রাচীন সংস্কৃতির চিহ্ন পরিলক্ষিত হয়। এখানে হযরত খান জাহান আলীর প্রতিষ্ঠিত মসজিদ ও দিঘী রয়েছে।
    বাজারে তাঁর অবস্থানকালে এ অঞ্চলে ব্যাপকভাবে ইসলাম প্রচার হয়েছিল। এখানে তিনি বেশ কয়েকটি মসজিদ নির্মাণ করেন। যার মধ্যে গোড়া মসজিদ, জোড় বাংলার মসজিদ, চেরাগদানি মসজিদ ও সাতগাছিয়া মসজিদ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
    তিনি কিছুকাল বাজারে অবস্থানের পর যশোরের মুড়লীতে উপস্থিত হন। অল্প কিছুদিন সেখানে অবস্থান গ্রহণ কালে সেখানে কয়েকটি মসজিদ ও কসবা গঞ্জ গড়ে তোলেন, পুকুর ও দিঘী খনন করেন। মুড়লী থেকে হযরত খান জাহান আলীর অনুচরবর্গ দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রথম দল মুড়লী থেকে খানপুরে যায়। সেখান থেকে বিদানন্দ কাঠিতে। এখানে বিরাট দীঘি খনন করা হয়। এ দলের নেতৃত্ব দেন বোরহান খাঁ বা বুড়ো খাঁ। অন্যদল ভৈরব নদীর তীর ধরে পয়গ্রাম কসবা হয়ে বাগেরহাট পৌঁছান। হযরত খান জাহান আলী (র.) স্বয়ং এ দলের নেতৃত্ব দেন। যশোরের মুড়লী কসবা থেকে তিনি পয়গ্রাম কসবা যান। এখানে তিনি দশ বছর অতিবাহিত করার পর পয়গ্রাম কসবার শাসনভার আবু তাহির নামক এক নবদীক্ষিত মুসলিম যুবকের উপর অর্পণ করে বাগেরহাটের দিকে রওনা হন।
    হযরত খান জাহান আলী (র.) এর প্রধান কীর্তিগুলো হলো বারোবাজার, মুড়লী কসবা, পয়গ্রামকসবা ও বাগেরটাট নগরী। ঐতিহাসিক ষাট গম্বুজ মসজিদ, বিবি বেগেনীর এক গম্বুজ মসজিদ, চুনাখোলা এক গম্বুজ মসজিদ, খান জাহানের বসতবাটী, রণ বিজয়পুর মসজিদ, খান জাহানের মাজার, পীর আলী মুহাম্মদ তাহিরের মাজার, দরগা মসজিদ, নয় গম্বুজ মসজিদ, সিঙ্গারা মসজিদ ও কুড়া মসজিদ, তিন গম্বুজ মসজিদ, বাবুর্চিখানা, খাঞ্জালীর জাঙ্গাল, ঠাকুরদীঘি, ঘোড়াদীঘি, করে দীঘি ইত্যাদি তাঁর অমর াবদান রয়েছে যা তাঁকে পৃথিবীতে অবিশ্বর করে রাখবে। বাগেরহাটে তাঁর সমাধি গাত্রে উৎকীর্ণ শিলালিপি থেকে জানা যায়, ১৪৫৯ খ্রিস্টাব্দে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর অবিনশ্বর কীর্তির কথা জগতের মানুষ কখনো ভুলবে না। শাহজাহানের তাজমহল যেমন তাঁকে পৃথিবীতে অমর করে রেখেছে তেমনি ষাট গম্বুজ মসজিদও হযরত খান জাহান আলী (র.) কে অমর করে রাখবে। তিনি ছিলেন, আছেন এবং আজীবন থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।

Post a Comment

Thenks for your comments.

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget