সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের মেলা
কিংবদন্তি আর প্রচলিত কাহিনী সমৃদ্ধ সাতক্ষীরার ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের মেলার ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে। শতশত বর্ষের স্মৃতি বিজড়িত এই মেলা উপলক্ষে ভাদ্র মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে সাতক্ষীরা শহরে সাজ সাজ রব পড়ে। ‘মনসা পূজা’ উপলক্ষে প্রতিষ্ঠিত সাতক্ষীরার এই গুড় পুকুরের মেলা গ্রাম বাংলার লোকজ ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে।
সাতক্ষীরার
এই ঐতিহ্যবাহী গুড় পুকুরের নামকরণ নিয়ে প্রচলিত কিংবদন্তি রয়েছে অনেক।
প্রচলিত কথা অনুযায়ী অনেকে বলেন, গুড় পুকুরের পুকুরটি ছিল গোলাকৃতি। এ জন্য
এর নাম গোল পুকুর থেকে পরিবর্তিত হয়ে হয়েছে গুড় পুকুর। আবার অনেকের মতে,
একজন গুড় বিবি এই পুকুরটি খনন করেন। তাই এর নাম গুড় পুকুর। আবার সর্পদেবী
মনসা পূজার প্রসাদ ফেলতে ফেলতে পুকুরের পানি মিষ্টি হয়ে যাওয়ায় কালক্রমে
পুকুরটির নামকরণ হয় গুড় পুকুর….. এমন মতোও প্রচলিত রয়েছে।
সাতক্ষীরা
তথা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের এই গুড় পুকুরের মেলার নামকরণ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে
অনেক প্রবন্ধকার, গবেষক বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপন করেছেন। বিভিন্ন তথ্য ও
উপাত্ত অনুযায়ী বাংলা বারো শতাব্দীর কোন এক সময়ে সাতক্ষীরার জনৈক ফাজেল খান
চৌধুরী শহরের পলাশপোল এলাকায় খাজনা আদায় করতে যান। দুপুরে ক্লান্ত হয়ে
তিনি গুড় পুকুরের দক্ষিণে একটি বটগাছ তলায় বিশ্রাম নিতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন।
কিন্তু পাতার ফাঁক দিয়ে আসা সূর্যরশ্মি তার মুখে পড়ে তার ঘুমের ব্যাঘাত
ঘটাতে থাকে। এ সময়ে একটি পদ্ম গোখরো সাপ এসে ফাজেল খানের মুখের ওপর ছায়া
দিতে থাকে। ঘুম ভেঙে ফাজেল খান দেখেন, সাপটি তার মুখে ছায়া করে আছে। এ
কারণে তিনি ওই স্থানটি হিন্দুদের মনসা পূজার জন্য দান করেন। তখন থেকেই এই
পলাশপোলে শুরু হয় মনসা পূজা। আর এই পূজা উপলক্ষেই শুরু ঐতিহ্যবাহী গুড়
পুকুরের মেলা। তবে এই প্রচলিত কথার বিষয়ে আজও কোন মীমাংসিত সিদ্ধান্ত জানা
যায়নি।
লোকজ
ঐতিহ্য নিয়ে যুগ যুগ ধরে প্রচলিত প্রায় দুই শত বছরের এই গুড় পুকুরের মেলা
প্রতিবছর ৩১ ভাদ্র থেকে শুরু হয়। এই মেলার আকর্ষণ বিভিন্ন স্থান থেকে আসা
নার্সারী, কুটিরশিল্প, আর কাঠের তৈরি খাট-পালঙ্কসহ বিভিন্ন প্রকার
আসবাবপত্র। শুধু সাতক্ষীরা নয়, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অনেক জেলা থেকেই
ব্যবসায়ীরা আসেন মেলায় তাদের তৈরি আসবাবপত্রের প্রদর্শনী নিয়ে। তবে ২০০২
সালে মেলা চলাকালীন সময়ে স্টেডিয়ামের সার্কাস প্যান্ডেলে ও সিনেমা হলে বোমা
হামলার পর বহিরাগত ব্যবসায়ীরা নিরাপত্তার অভাবে মেলায় আসা কমিয়ে দিয়েছেন।
মেলার মূল আকর্ষণ সার্কাস, যাত্রা ও পুতুল নাচসহ শিশুদের আনন্দদায়ক
বিষয়গুলো বোমা হামলার পর থেকে মেলায় নিষিদ্ধ থাকলেও এ বছর অনুষ্ঠিতব্য
মেলায় সার্কাস, পুতুল নাচের অনুমতি দেয়া হয়েছে আয়োজক কমিটির পক্ষ থেকে।
গুড় পুকুরের মূল মেলা বসে শহরের পলাশপোলের স্কুল সংলগ্ন মনসা পূজা ম-পের পাশে। আগে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কজুড়ে মেলার স্টল বসলেও এখন মেলা বসে সাতক্ষীরা শহরজুড়ে। তবে এবারের মূল মেলা বসবে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে।
গুড় পুকুরের মূল মেলা বসে শহরের পলাশপোলের স্কুল সংলগ্ন মনসা পূজা ম-পের পাশে। আগে সাতক্ষীরা-কালীগঞ্জ সড়কজুড়ে মেলার স্টল বসলেও এখন মেলা বসে সাতক্ষীরা শহরজুড়ে। তবে এবারের মূল মেলা বসবে শহীদ আব্দুর রাজ্জাক পার্কে।
হিন্দু
সম্প্রদায়ের মনসা পূজা দিয়েই শুরু হয় এই গুড় পুকুরের মেলা। সাতক্ষীরার এই
জনপ্রিয় মেলার ঐতিহ্য ধরে রাখতে আয়োজকরা সচেষ্ট থাকলেও নানাবিধ কারণে
ক্রমান্বয়ে হারিয়ে যাচ্ছে শত শত বছরের এই গুড় পুকুরের মেলার ঐতিহ্য।
ইতোমধ্যে মনসা পূজার স্থান গুড় পুকুরের দেবোত্তর সম্পত্তির পূজাম-পটির
সামনের বেশিরভাগ অংশ দখল হয়ে গেছে।
ঐতিহ্যবাহী
গুড়পুকুর মেলা সুষ্ঠ ভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে সম্প্রতি জেলা প্রশাসক এর
সম্মেলন কক্ষে মেলার প্রস্তুতিমূলক সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত অনুষ্ঠানে জেলা
প্রশাসক নাজমুল আহসানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র আলহাজ্ব এমএ
জলিল, অতিঃ জেলা প্রশাসক সার্বিক এএফএম এহতেশামুল হক, সহকারী পুলিশ সুপার
সদর আনায়ার সাঈদ, জেলা আ’লীগের সাঃ সম্পাদক আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম,
প্রেসক্লাবের সভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, সাঃ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান
উজ্জ্বল, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাঃ সম্পাদক শেখ নিজাম উদ্দিন, চেম্বার অব
কমার্স সিনিয়র সহ সভাপতি মিজানুর রহমান, কাউন্সিলর আসাদুজ্জামান অনজু,
ফারহা দিবা খান সাথী, ফরিদা আক্তার বিউটি, কৃষক লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ
সাধু, আ’লীগ নেতা নূরুল হক, নার্সারী সমিতির পক্ষে আব্দুল জলিল, সমির
কুমার।
সভায়
বক্তাদের সম্মতিতে আগামী ১৮সেপ্টেম্বর থেকে ২অক্টোবর পর্যন্ত মেলা চলবে এবং
প্রতিদিন সকাল থেকে রাত্র ৯টা পর্যন্ত মেলার কার্যক্রম চলবে। উক্ত সভায়
সকলের সম্মতি ক্রমে মেলা ব্যবস্থাপনা পরিচালনার জন্য অতিঃ জেলা প্রশাসক
সার্বিক এএফএম এহতেশামুল হককে আহ্বায়ক ও নেজারত ডেপুটি কালেক্টর আবু সাঈদ
কে সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষনা করা হয়। এ সময় উপস্থিত
ছিলেন কমিটির সকল সদস্য এবং সাংবাদিকবৃন্দ।
Post a Comment
Thenks for your comments.