Halloween Costume ideas 2015

Behiond The Seen of Bangladesh

অপার সম্ভাবনাময় সিলেটের পর্যটন

অপার সম্ভাবনাময় সিলেটের পর্যটন


শাহ্ দিদার আলম নবেল ও সাঈদ চৌধুরী টিপু: সমতল ভূমির এক প্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে সুউচ্চ পাহাড়। পাহাড়ের গায়ে খেলা করছে সাদা মেঘ। বৃষ্টি হলে পাহাড় বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণাধারার জলে চিকচিক করে সূর্য। অনতিদূরে হাওর। হাওরের বুকে নানা জাতের পাখির ডুবো খেলা। পাহাড়-সমতল-জলাভূমির এমন অপূর্ব সৌন্দর্যের দেখা মেলে কেবল সিলেটে। এ অঞ্চলের মাটির নিচে প্রকৃতি যেমন লুকিয়ে রেখেছে মূল্যবান সম্পদ তেমনি উপরে মেলে ধরেছে তার অপরূপ সৌন্দর্য। আর শাহজালালের (রাহ.) চরণ স্পর্শে এ অঞ্চলে তৈরি হয়েছে আধ্যাত্মিকতার ছায়াময় পরিবেশ। জালালি কইতরের ডানা ঝাপটানো আর বাক-বাকুমে ঘুম ভাঙে এখানকার অধিবাসীদের, কমলা লেবু আর চায়ের পাতার ঘ্রাণ পাগল করে তোলে তাদের হৃদয়। প্রকৃতির কোলে বেড়ে উঠা এ জনপদের মানুষের কণ্ঠে তাই খেলা করে প্রকৃতিরই সুর। তাই সুরমার তীর ভরে উঠে হাছন-রাধা রমন আর করিমের দরাজ কণ্ঠে। সব মিলিয়ে হাজার বছরের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যে লালিত এ জনপদ তাই সারা দেশের কাছে পরিচিত পর্যটন নগরী হিসেবে। প্রকৃতির উদারতা সিলেটকে করেছে পর্যটনসমৃদ্ধ। পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের অভাবে এ সম্ভাবনার বিকাশ ঘটছে না। পর্যটন শিল্পের বিকাশ ঘটানো সম্ভব হলে এ অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার আমূল পরিবর্তন হতো বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

সিলেটের পর্যটনের বিচিত্রতা :
সিলেট পর্যটনে অপার সম্ভাবনারই এক প্রতিশব্দ। যুগে যুগে এই জনপদের রূপ-লাবণ্যের টানে ছুটে এসেছেন পর্যটকেরা। বিশ্বখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতা, রূপ পিয়াসী কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর-কে নেই সে তালিকায়। সিলেটের রূপে মুগ্ধ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এ জনপদের নাম দিয়েছিলেন ‘শ্রীভূমি’। বৈচিত্র আর সৌন্দর্যের কারণে সিলেটের পর্যটন ক্ষেত্রগুলোর আকর্ষণ কখনওই ফুরোবার নয়।

রূপের খনি :
প্রকৃতি যেনো সিলেটকে নিজের মতো করে সাজিয়েছে। সৌন্দর্যের ভা-ার এখানটাতে উপুড় করে দিয়েছে প্রকৃতি। অকৃপণ হাতে সাজিয়েছে এই অঞ্চলের রূপ-লাবণ্য। সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরো একধাপ বর্ণিল করেছে উত্তরে ভারতের প্রায় ৪৫০ কিলোমিটার দীর্ঘ পর্বতমালা। সিলেটে বেড়াতে এসে পর্যটকরা সীমান্তের ওপারের বাড়তি সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন খুব সহজেই। প্রকৃতিকন্যা হিসেবে পরিচিতি পাওয়া জাফলং বেড়াতে এসে পর্যটকরা হারিয়ে যাওয়ার সুযোগ পান খাদিম রেইন ফরেস্ট, পান্না সবুজ জলের লালাখাল, দেশের প্রথম সমতল চা বাগান, তামাবিলস্থ গ্রিনপার্ক এবং পাহাড়, নদী ও জলধারার অপূর্ব মিশেল পাংথুমাইয়ে। আর বাড়তি পাওনা-বর্তমানে দেশের পর্যটনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ রাতারগুল। এশিয়ার ২৬টি জলাবনের অন্যতম গোয়াইনঘাটের রাতারগুল না দেখলে সিলেটের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ অসম্পূর্ণ থেকে যাবারই কথা। উত্তরে সিলেট নগরীর সীমানা পেরুলেই দেখা যাবে থরে থরে সাজানো চা বাগান। লাক্কাতুরা, মালনিছড়া আর তারাপুর চা বাগানে নারী শ্রমিকদের চা চয়নের দৃশ্যে স্থির হয়ে যায় পর্যটকের চোখ। সিলেটজুড়ে জালের মতো ছড়িয়ে থাকা নদীগুলোও আলাদা দেশের অন্য এলাকা থেকে। কোনটা স্বচ্ছ জল, কোনটা সীমান্তরেখা বরাবর বয়ে চলা অথবা কোনটা পাথর কোয়ারির জন্য পর্যটকদের চোখ আটকে রাখে। আর সমুদ্রসম হাকালুকি হাওরের মায়া কাটানো কি সম্ভব।

সিলেটের মতো টিলা, পাহাড়, ঘনসবুজ বন আর চা বাগানে সাজানো না হলেও সুনামগঞ্জে প্রকৃতি তার উদারতা মেলে ধরেছে বিশাল জলরাশির মাঝে। তাইতো টাঙ্গুয়ার হাওর ইতোমধ্যে পর্যটকদের কাছে পরিচিতি পেয়েছে ‘মিনি সমূদ্র’ হিসেবে। আর তাহিরপুরের যাদুকাটা বা বারেক টিলার সৌন্দর্যের টানে পর্যটকরা দূর্গম পথে পা বাড়াতেও দ্বিধা করেন না।

সিলেটের ঐতিহ্য চা আর কমলা ভা-ারের প্রকৃত রূপ দেখতে হলে যেতে হবে মৌলভীবাজারে। শ্রীমঙ্গলের চা বাগান, লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান, মাধবকুন্ড, পরিকুন্ড, হামহাম মৌলভীবাজারের পর্যটনকে অন্যমাত্রায় পৌঁছে দিয়েছে। আর এর সবটুকুই কেবল প্রকৃতির কল্যাণে। সিলেট বেড়াতে এসে মাধবকুন্ড জলপ্রপাত দেখতে না পারলে অতৃপ্ত থেকে যান পর্যটকরা। আর হবিগঞ্জে সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান- সে প্রকৃতির আরেক উদারতা, বিচিত্রতা।

ঐতিহ্যের পরশ :
সিলেটর গায়ে গায়ে জড়িয়ে আছে ইতিহাসের বাক বদলের নানা গল্প। সিলেটজুড়ে ইতিহাসের নানা নিদর্শন এখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সিলেটের মধ্যখানে শুয়ে আছেন সিলেট বিজয়ী বীর সাধক হযরত শাহজালাল (রাহ.)। পথে পথে ছড়িয়ে আছে তার সিলেট বিজয়ের স্মারক। সিলেটের এমন কোনো এলাকা নেই যেখানে খুঁজে মিলবে না শাহজালালের সফরসঙ্গীর সমাধি। শাহজালালের কাছে পরাজিত গৌড়ের রাজা গৌবিন্দের রাজ প্রাসাদের চিহ্ন এখনও টিকে আছে নগরীতে। আছে তার পালিয়ে যাওয়ার পথের চিহ্নও। জৈন্তার প্রতাপশালী নারী রাজ্যের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে জৈন্তা রাজবাড়ি। এখানে টিকে থাকা মেগালিথিক পাথরের নিদর্শন আজও জানান দিচ্ছে সিলেটের প্রাচীনত্বের। জৈন্তার প্রাচীনত্বের প্রমাণ রয়েছে মহাভারতেও। বাক বদলের ইতিহাসেও সিলেটের গৌরবোজ্জ্বল অংশীদারিত্ব রয়েছে। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, দেশভাগ, ভাষা আন্দোলন এবং মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে সিলেটের গৌরবময় সক্রিয় অংশগ্রহণ। মুক্তিযুদ্ধের গৌরবময় স্মৃতির অংশ হয়ে আছে হবিগঞ্জের মাধবপুরের তেলিয়াপাড়া চা বাগান। এখানেই প্রথম মুক্তিযুদ্ধের আনুষ্ঠানিকপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।

এছাড়া নগরীর বুকে টিকে থাকা রায়নগর ও মীর্জাজাঙ্গাল রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ এবং সুনামগঞ্জের গৌরারং জমিদার বাড়ি-এ অঞ্চলের সভ্যতা, জন ও জনপদের ইতিহাস বহন করে চলছে। এসব প্রত্মতাত্ত্বিক নির্দশন গবেষকদের চোখেই আকর্ষণীয় নয় নয় সাধারণ পর্যটককেও টেনে নিয়ে যায় ইতিহাসের পাতায়। যারা অন্তর্চক্ষু দিয়ে ইতিহাসের পাতা ঘাঁটেন সেসব পর্যটকরা এসব স্থানে এসে সভ্যতার সৌন্দর্য খুঁজে ফিরেন।

সিলেট এক পূন্যভূমি :
হযরত শাহজালালের (রাহ.) চরণস্পর্শে পূন্যভূমির তকমা পাওয়া সিলেট তীর্থভূমি হিসেবে পরিচিত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের কাছেও। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছেও সিলেট তীর্থসম। ভগবান শ্রী চৈতন্যের আদি পুরুষের ভিটা এই সিলেটেই। তার পিতা জগন্নাথের জন্ম সিলেটেই। শ্রী চৈতন্য তথা নদীয়ার নিমাই’র গাঢে মায়ের গর্ভে থাকতেই লেগেছিলো সিলেটের হাওয়া। ঐতিহাসিকদের মতে, খ্রিস্টের জন্মের অনেক আগে থেকেই সিলেট বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের তীর্থে হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছিলো। উপমহাদেশজুড়ে ছড়িয়ে থাকা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের ৫১টি পীঠস্থানের দুইটির অবস্থান সিলেটে। এর মধ্যে একটি সিলেট সদর উপজেলার কালাগুলে অপরটি জৈন্তাপুর উপজেলার হরিপুরে। এছাড়া সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের পণাতীর্থের বিশেষ কদর রয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের কাছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বিশ্বাস করেন, এখানকার জাদুকাটা নদীতে বিশেষ সময়ে ¯œান করলে গঙ্গা¯œানের পূন্য মেলে। তাই বছরের নির্দিষ্ট সময়ে পণাতীর্থে দেশ বিদেশের পূন্যার্থীদের ভিড় জমে। এ সকল তীর্থের বাইরে সিলেটে রয়েছে বৌদ্ধবিহার, ঐতিহ্যবাহী প্রেসবিটারিয়ান চার্চ। এসব তীর্থস্থানে প্রতিদিনই হাজার হাজার পর্যটকদের আগমন ঘটে। বিশেষ ধর্মীয় উৎসবে এর মাত্রা বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

সিলেটের নামকরণের সাথেও মুসলিম এবং সনাতন ধর্মালম্বীদের আবেগ জড়িয়ে আছে। সিলেটের নামকরণ সম্পর্কে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ কিংবদন্তিমতে, হযরত শাহজালালের (রাহ.) সিলেট বিজয়ের সময় তাকে রুখতে গৌড়ের রাজা গোবিন্দ পথে নানা প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেন। শাহজালালের বিজয়যাত্রাকে থমকে দিতে রাজ্যের প্রবেশমুখ বিশাল পাথর দিয়ে আটকে রাখেন রাজা গোবিন্দ। কিন্তু সে পাথরখ-ও শাহজালালের পথ আটকে রাখতে পারেনি। তিনি পাথরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, শিল (পাথর) হট (সরে যাও)। তার নির্দেশে পাথরখ-টি সরে গিয়ে পথ করে দেয়। অনেকের মতে শিল-হট শব্দ যুগল থেকেই সিলেট নামের উৎপত্তি। আবার পুরাণমতে, সতী বা পার্বতী দেহত্যাগ করলে তার দেহের বিভিন্ন অংশ উপমহাদেশের একান্নটি স্থানে পতিত হয়। এর মধ্যে দু’টি হাড় (হড্ড) সিলেটেও পতিত হয়। সতীর অপর নাম শ্রী, তার হাড় মানে শ্রীহড্ড। শ্রীহড্ড থেকেই শ্রীহট্ট নামের উৎপত্তি বলে অনেকের অভিমত। সিলেট নামকরণ প্রসঙ্গে অন্য একটি বর্ণনা হচ্ছে, প্রাচীন গৌড়ের রাজা গুহক তার কন্যা শীলাদেবীর নামে একটি হাট স্থাপন করেন। সেই শীলা হাটই কালের পরিক্রমায় সিলেটে পরিণত হয়।

নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী :
নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর বৈচিত্রময় জীবনধারা সিলেটের পর্যটন ক্ষেত্রকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। সিলেটে বসবাসকারী মণিপুরী, খাসিয়া, লালেং বা পাত্র, চা শ্রমিক, ওরাঁও সম্প্রদায়ের জীবন বৈচিত্র্য বর্ণিল করেছে এখানকার পর্যটনকে। মণিপুরীদের তাঁতশিল্প, মাতৃতান্ত্রিক খাসিয়া সম্প্রদায় ও চা শ্রমিকদের জীবন-জীবিকা পর্যটকদের মূগ্ধ করে। ওরাঁও, লালেং ও চা শ্রমিকদের মাটির তৈরি আর খাসিয়াদের মাচার উপর তৈরি ঘর দেখে পর্যটকরা বিমোহিত হন। খাসিয়া ও মণিপুরী সম্প্রদায়ের লোকজনের পরিধেয় পোশাকও ভিন্ন। মণিপুরী সে পোশাকের চাহিদা রয়েছে বাঙালি ললনাদের মাঝেও। সে চাহিদা কেবল সিলেটের সীমানাতেই আটকে থাকেনি। ছড়িয়ে পড়েছে দেশজুড়ে।

সমৃদ্ধ সংস্কৃতির ছবি :
সিলেট মানেই যেনো মন পাগল করা লোকগানের সুর। সিলেটের হাওয়ায় হাওয়ায় ছড়িয়ে আছে মাটির কথা, মাটির সুর। বাংলা তথা ভারতীয় গণসঙ্গীতের পুরোধা ব্যক্তিত্ব হেমাঙ্গ বিশ্বাস এই সিলেটেরই সন্তান। শতবর্ষ আগে হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটের মিরাশির গ্রামে জন্ম নেন মেহনতি মানুষের অধিকার আদায়ের এ সংগ্রামী যোদ্ধা। লোকগানের স¤্রাট হাছন রাজা সিলেটেরই আরেক পরিচয়। সুনামগঞ্জ ও সিলেটে অবস্থিত হাছন রাজার স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলো পর্যটকদের আলাদাভাবে টানে। সিলেটের ভাটি অঞ্চলে জন্ম নেওয়া বাউল স¤্রাট আবদুল করিমের গান তো এখন লোকের মুখে মুখে ফিরে। আবদুল করিমের গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাইয়ের উজান ধল গ্রামে অনুষ্ঠিত করিম মেলা প্রতি বছর বাউল ও বাউলপ্রেমীদের উৎসবে পরিণত হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরাও এ মেলায় অংশ নেন। সিলেটের সন্তান বাউল সাধক রাধা রমন, দুর্বিন শাহ, আরকুম শাহ, শীতালং শাহ’র স্মৃতি বিজড়িত স্থানগুলোরও রয়েছে ঐতিহাসিক গুরুত্ব। রুচির বিকাশে হারিয়ে যাওয়া গাটু বা ঘেটু গানের জন্মও এই সিলেটেই। এই গাটু বা ঘেটু গান নিয়ে ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ নামে চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন জনপ্রিয় নির্মাতা কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ। সদ্যপ্রয়াত এ চলচ্চিত্র নির্মাতার শেষ ছবিও এটি।

কেবল গান নয় নৃত্য শিল্পেও সিলেটের গৌরবগাঁথার কমতি নেই। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন সিলেট এসেছিলেন মাছিমপুরে মণিপুরী নৃত্য দেখে তিনি মুগ্ধ হয়েছিলেন। সিলেট থেকেই মণিপুরী নৃত্য বিশ্বময় ছড়িয়ে দিয়েছিলেন তিনি। শান্তি নিকেতনে মণিপুরী নৃত্য শিক্ষাদানের জন্য সিলেট থেকেই শিক্ষক নিয়ে গিয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ।

সাহিত্য-সংস্কৃতিতে সিলেটের অবদানও অনেক সুপ্রাচীন। ঐতিহাসিকরা প্রমাণ পেয়েছেন বাংলা সাহিত্যের আদি নিদর্শন চর্যাপদেও সিলেট এবং সিলেটীদের অংশীদারিত্ব রয়েছে। চর্যাপদে সিলেটের মানুষের কথ্য ভাষার মিল থাকাটা এর সবচেয়ে বড় প্রমাণ। গবেষকদের মতে, চর্যার অনেক পদকর্তাই সিলেটের অধিবাসী ছিলেন। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ময়মনসিংহ গীতিকা‘র অধিকাংশ কাহিনীও সিলেট অঞ্চলের বলে ঐতিহাসিকদের দাবি। গীতিকায় বর্ণিত স্থানগুলোর অস্তিত্বও সিলেটেই খুঁজে মেলে। তাদের মতে, ময়মনসিংহ গীতিকা আদতে ‘সিলেট গীতিকা’ কিংবা ‘জালালাবাদ গীতিকা’। নিজস্ব সাহিত্য-সংস্কৃতিকে আগলে রাখার জন্য সিলেটের নিজস্ব লিপিও রয়েছে। নাগরি নামে এ লিপিরও রয়েছে সমৃদ্ধ ইতিহাস। বাংলা ভাষার বিকল্প লিপি সিলেটি নাগরীই হচ্ছে পৃথিবীর একমাত্র ভাষাহীন লিপি।

শেষ কথা :
অপার সম্ভাবনা সত্ত্বেও সিলেটে পর্যটন শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটছে না। পর্যটন নগরী হিসেবে স্বীকৃতি না পাওয়া, নাজুক যোগাযোগ ব্যবস্থা, দুর্বল অবকাঠামো ও উদ্যোগের অভাবে এখনো সেই অনুপাতে আসছেন না দেশী-বিদেশী পর্যটক। বিপুল সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও কেবল পরিকল্পনার অভাবে বিদেশী পর্যটক আকৃষ্ট করা যাচ্ছে না। সরকারের সদিচ্ছাই বদলে দিতে পারে সিলেটের পর্যটন সম্ভাবনা- এমন দাবি পর্যটন শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের। সিলেটে পর্যটন শিল্পের বিকাশ হলে এ অঞ্চলে বিদেশী বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোক্তারাও লাভবান হবেন। তৈরি হবে বিপুল কর্মসংস্থানেরও।

Post a Comment

Thenks for your comments.

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget