Halloween Costume ideas 2015

Behiond The Seen of Bangladesh

হাম-হাম জলপ্রপাত: পাহাড়ের বুকে ঝর্ণার মিতালী


হযরত শাহজালাল (রহ.), হযরত শাহপরাণ (রহ.)সহ ৩৬০ আউলিয়ার পুণ্যভূমি এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যে ভরপুর আমাদের বৃহত্তর সিলেট। সৃষ্টির সৌন্দর্য্য আর প্রকৃতির মাধুর্য্য- এই দুই মিলে যখন তৈরি হয় এক অপরূপ মিশ্রণ, তখন তার দর্শনে বেঁচে থাকার ইচ্ছে হয়ে ওঠে আরেকটু প্রবল। প্রকৃতির এই অপরূপ সৃষ্টির অন্যতম একটি হলো বৃহত্তর সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জে অবস্থিত ‘হাম-হাম’ জলপ্রপাত। লোকচক্ষুর অন্তরালে দীর্ঘদিন নিজের মহিমা লুকিয়ে রেখেছিল এই জলপ্রপাত। দূর্গম পথ আর লোকালয়ের বেশ বাইরে থাকার কারনে এতদিন এই জলপ্রপাতটি কারও চোখে পড়েনি। বর্তমানে এই জলপ্রপাতটি দেখতে আর রোমাঞ্চকর প্রবেশপথ পাড়ি দিতে আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা প্রতিদিনই ভীড় করেন দেশের এই উত্তর-পূর্ব প্রান্তে। প্রকৃতির নয়নাভিরাম সৃষ্টি এই হাম-হাম জলপ্রপাতটিতে বেড়িয়ে আসতে প্রথমেই আপনাকে যেতে হবে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। সেখান থেকে হালকা খাবার আর পানীয় নিয়ে রওয়ানা দিতে হবে প্রায় ২০ কিলোমিটার দুরবর্তী কমলগঞ্জ উপজেলার উদ্দেশ্যে। কমলগঞ্জ থেকে আদমপুরবাজার হয়ে আরও প্রায় ২৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছবেন ন্যাশনাল টি কোম্পানির অধীনস্থ কুরমা চা বাগান এলাকায়। কুরমা চা বাগান থেকে দুই ধারে চা গাছের সবুজ নিচু পাহাড়ের সারির মধ্য দিয়ে পৌঁছে যাবেন ভারতের সীমানা ঘেষে অবস্থিত চাম্পারায় চা বাগানে। এখানে এসে ২০০-৩০০ টাকা দিয়ে হাম-হাম যাওয়ার স্থানীয় গাইড জোগাড় করতে খুব একটা সমস্যা হবে না। তবে চাম্পারায় চা বাগানের পূর্ব সীমায় অবস্থিত ‘কলাবন’ নামক এলাকা পর্যন্তই নিয়ে যেতে পারবেন গাড়ি। এরপর থেকে খালি পায়ে বাংলাদেশ বন বিভাগের সংরক্ষিত এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিতে হবে আপনাকে। প্রায় ৫ কিলোমিটার এই পদযাত্রায় দেখা মিলবে গভীর জঙ্গল, পশুপাখি আর পাহাড়ের গা বেয়ে আঁকাবাঁকা বন্ধুর পথ। কখনও হাঁটু জল, কখনও পাথুরে পিচ্ছিল পথ, আবার কখনও লতাপাতা ধরে পাহাড়ে চড়ার মত দুঃসাহসিক অভিযান শেষে দেখা মিলবে সেই হাম-হাম জলপ্রপাতের। পাহাড়ের বুকে ঝর্ণার এই মিতালী দেখে মনে হবে যেন কবি পূর্ণেন্দু পত্রী’র ‘সেই গল্পটা’। যেখানে পাহাড় ভালবেসেছিল মেঘকে। প্রায় ৫০ ফুট উপর থেকে ৫-৬ মিটার প্রশস্ত স্বচ্ছ পানির ধারা। এই অবিরাম জল প্রপাতের জল পতনের শব্দ এখানে পৌঁছার অনেক আগেই কানে পৌঁছবে। রুপান্তরিত বিশাল শিলাখন্ডের গা ঘেষে প্রতিনিয়ত পানির প্রবাহের ফলে পুরো জলপ্রপাত এলাকাটি হয়ে উঠেছে এক পিচ্ছিল রোমাঞ্চকর পর্যটন ক্ষেত্রে। যদি আপনি আরও একটু রোমাঞ্চ অনুভব করতে চান তাহলে লতাপাতা আর গাছের শিকড় ধরে উঠে যেতে পারেন জলপ্রপাতের শীর্ষ প্রান্তে, কিন্তু সেটা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জলপ্রপাতের নিচে গড়ে উঠেছে প্রায় ৪০ মিটার বিস্তৃত স্বচ্ছ জলাশয় যেখানে চাইলে অনেকের মত আপনিও নেমে পড়তে পারেন শীতল পানিতে গা ভেজাতে। হাম-হাম জলপ্রপাত কে বা কারা প্রথম আবিষ্কার করে অথবা প্রথম অভিযান কারা চালিয়েছিল- এ ব্যাপারে কোন সঠিক তথ্য এখানে কারও কাছে নেই। তবে লোকমুখে শোনা যায় বছর কয়েক আগে একদল বাঁশ সংগ্রহকারী শ্রমিক বাঁশের খুঁজে জঙ্গলের গভীরে প্রবেশ করলে দেখতে পান এই অপরূপ জলপ্রপাতটি। স্থানীয়দের মতে এই জলপ্রপাতের প্রকৃত নাম হলো ‘হাম্মাম’। যার শাব্দিক অর্থ দাঁড়ায় গোসলখানা। আবার অনেকের মতে এই জলপ্রপাতের অদূরে বসবাসরত পাহাড়ি আদিবাসিদের ভাষায় পানি পড়ার শব্দকে বলা হয় হাম-হাম, আর এর থেকেই এর নাম হয়েছে হাম-হাম জলপ্রপাত। তবে বলতেই হয়, নামে কী আসে যায়। এখানে পৌঁছে আপনি যে নিরাশ হবেন না সেটা নিশ্চিত। চারিদিক ঘন জঙ্গলে ঘেরা সম্পূর্ন প্রাকৃতিকভাবে গড়ে ওঠা এই সুউচ্চ জলপ্রপাতটি দর্শনে আপনিও মুগ্ধ হয়ে ভূলে যাবেন দূর্গম পথের সব ক্লান্তি। তবে, অনেকেই মনে করেন প্রবেশপথের বিপদজ্জনক দূর্গম পথটাই এই হাম-হাম জলপ্রপাতকে করেছে আরও আকর্ষনীয় এবং মাধবকুন্ড থেকে আলাদা। হাম-হাম জলপ্রপাত দেখতে দেখতে যে কোন পর্যটকের মনে পড়ে যেতে পারে পূর্ণেন্দু পত্রী’র কবিতার লাইনগুলো- ‘পাহাড়টা, আগেই বলেছি ভালবেসেছিল মেঘকে.. ... এখনো শেষ হয়নি গল্পটা। ...... বিশ্বাস না হয় চিরে দেখতে পারো পাহাড়টার হাড়-পাঁজড়, ভিতরে থৈ থৈ করছে শত ঝর্ণার জল।’

Post a Comment

Thenks for your comments.

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget