Halloween Costume ideas 2015

Behiond The Seen of Bangladesh

জীবনের গল্প

নীলা নামে ১৭ বা ১৮ বছরের একটা সুন্দরী মেয়ে আমাদের অফিসে জয়েন করেছে আজ থেকে প্রায় সাত বা আট মাস আগে। ওর কাজ হচ্ছে অফিস পরিষ্কার করা, ব্যাংকে যাওয়া ও বাইরের কাজগুলো করা। খুব সুন্দর সুন্দর পোশাক পরে আসে। মিয়ানমারের মেয়ে। প্রথম যেদিন দেখলাম ওর সঙ্গে একটু কথা বললাম। বাড়িতে কে কে আছে, কত দিন হলো ব্যাংককে এসেছে, কোথায় থাকে ইত্যাদি। খুব ভালো লাগল।
প্রতিদিন সকালে যখন দেখা হয় জিজ্ঞাসা করি, কিছু খেয়েছ সকালে? কোনো দিন উত্তর দেয় খেয়েছি, কোনো দিন না, পরে খাব।
একদিন কথায় কথায় বলল দেশে ওর বাবা-মা আছে তাদের জন্য টাকা পাঠায়। ফোনে খোঁজখবর নেয়।
আমি সাধারণত ওকে বাইরের কাজে পাঠালে কিছু টাকা দিই যাতে এক গ্লাস ওভালটিন বা আইসক্রিম কিনে খেতে পারে। ও নেয়। কোনো কোনো দিন নিতে চায় না। তারপরও জোর করে দিই।
কয়েক দিন আগের ঘটনা। আমাদের অফিসের দুটি কম্পিউটার আছে কম্পিউটার শপে, সঙ্গে প্রিন্টার। আমাকে গিয়ে সব ঠিক আছে কি না চেক করে আনতে হবে। নীলাকে সঙ্গে নিলাম। যেতে যেতে কথা বলছি ওর সঙ্গে। বললাম তোমার বাবা-মায়ের জন্য খারাপ লাগে না। এই বিদেশে একা একা থাক?
হঠাৎ​ করে ও বলল, আমার তো আসল মা নেই, বাবা আছে। বাবা আবার বিয়ে করেছে। সেই ঘরে আমার তিন ভাইবোন আছে। আমি আমার দাদির কাছে বড় হয়েছি। আমি যে বাড়ি টাকা পাঠাই তা আমার দাদির জন্য। আমার দাদি আমার বাবার সঙ্গেই থাকে। আমি ফোন করি আমার দাদির কাছে।
জিজ্ঞাসা করলাম, তোমার মা কোথায়? তোমার আসল মা নেই আর আমি এত দিনেও জানি না, তুমি তো আমাকে আগে বলনি!
আমার যখন ৯ মাস বয়স তখন আমার মা আমাকে রেখে থাইল্যান্ড আসে কাজের জন্য। এখানে আসার দুই বছর পর এক পাকিস্তানিকে বিয়ে করে। তারপর তার সঙ্গে পাকিস্তানে চলে যায়। সেখানে নাকি তার দুই ছেলে আছে। আমি বড় হয়ে এই সব গল্প শুনেছি। কারণ আমার নানি বাড়ি দাদি বাড়ি থেকে বেশি দূরে না। পাশাপাশি গ্রাম।
আমি বললাম তুমি বড় হয়ে কোনো দিন তোমার মাকে খোঁজ করনি। ও বলল, কয়েক দিন আগেই একজন ওকে ছবি দেখিয়েছে, ওর মা ফেসবুকে আছে, কিন্তু ও দেখতে চায় না। আমি বললাম, কেন, মাকে দেখতে ইচ্ছা করে না?
নীলা দেখলাম মুখ করুণ করে বলছে, দেখতে ইচ্ছা করে। কিন্তু যে মা আমাকে ছেড়ে চলে গেছে, কোনো দিন আমার খোঁজ নেয়নি, আমার দাদি আমাকে বড় করেছে, আমি যদি আমার মায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করি আমার দাদি খুব কস্ট পাবেন। তাই আমি আমার মা ফেসবুকে আছে জেনেও আমি তার খবর নিই না। আমার নানিও ব্যাংককে আছে। অন্যদের কাছ থেকে আমার খবর নেয়। কিন্তু আমার কাছে আসার সাহস পায় না।
আমি বললাম তুমি কেন তোমার মাকে নিয়ে নেগেটিভ চিন্তা করছ? একটু ভাব আজ থেকে ১৭ বছর আগে যখন তোমার মা এই দেশে এসেছিল, তখন এত সহজ ছিল না কাজ পাওয়া বা সেটেল হওয়া। হয়তো তোমার মায়ের জীবনে যা কিছু ঘটেছে তার ওপরে তার কোনো হাত ছিল না। এই পরবাসে হয়তো তার কোনো উপায় ছিল না। তাই হয়তো ওই পাকিস্তানি লোকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিল আর তাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিল। তাই বলে কি মনে হয় সে তোমাকে ভুলে গেছে? হয়তো তোমাকে ভোলেনি। মনে করে প্রতিদিন, কিন্তু কাউকে বলতে পারে না। হয়তো চুপি চুপি তোমার খবর নেয়, তুমি হয়তো জান না। মায়ের ওপর রাগ করে থেকো না। তোমার সঙ্গে তোমার মায়ের দেখা একদিন না একদিন হবে। আমি সেই দোয়া করি।
নীলা অভিমান ভরা কণ্ঠে বলল আমি চাই না আমার সঙ্গে আমার মায়ের দেখা হোক। আমাকে কেন ছেড়ে গিয়েছিল আর কোনো দিন কেন আমার খোঁজ নেয়নি।
মনে মনে ভাবতে লাগলাম মানুষের জীবন কত বিচিত্র। কত শত ঘটনা আছে এ রকম মানুষের জীবনে। আমি জানি কোনো একদিন হয়তো ওর মায়ের সঙ্গে ওর দেখা হবে, কথা হবে। একে অপরকে জড়িয়ে ধরবে। তারপর হয়তো এই রাগ আর থাকবে না। কিন্তু কবে সেই দিন? সেই দিন কি আসলেই আসবে নীলার জীবনে? আমি মনে মনে চাই নীলার জীবনে সেই দিন আসুক। ও ওর মায়ের বুকে মাথা রেখে পরান ভরে কাঁদুক, সব অভিমান ভুলে যাক।। এই পৃথিবীটা শুধুই হয়ে উঠুক মা আর মেয়ের।
Labels:

Post a Comment

Thenks for your comments.

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget