Halloween Costume ideas 2015

Behiond The Seen of Bangladesh

খেলোয়াড়দের উর্বরভূমি খুলনা



 মাশরাফি মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, সৌম্য সরকার, মুস্তাফিজুর রহমান ও মেহেদী হাসান মিরাজ...। এক নিঃশ্বাসে যাদের নাম বলা হল তারা বাংলাদেশের ক্রিকেটের এক একটি রত্ন। এ নিয়ে কারও আপত্তি থাকার কথা নয়। আরেকটি অনাপত্তির বিষয় হল, এরা সবাই বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের খেলোয়াড়।

শুধু বর্তমান নয়, নিকট ও সুদূর অতীতের দিকে তাকালে দেখা যাবে খুলনা খেলোয়াড়দের খনি। ক্ষণজন্মা খেলোয়াড়প্রসবা এই অঞ্চলে যেমন বইছে রূপসা, চিত্রা, কপোতাক্ষ, নবগঙ্গা নদী, তেমনি খেলোয়াড় তৈরির ফল্গ–ধারাও বইছে এখানে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে স্বর্ণসাফল্যের মিছিলে সম্মুখ সারিতে রয়েছেন খুলনা অঞ্চলের বহু তারকা খেলোয়াড়।

ওয়ানডে ও টি ২০ অধিনায়ক মাশরাফি মুর্তজা থেকে শুরু করে সর্বশেষ ক্রেজ ‘বিস্ময় বালক’ মেহেদী হাসান মিরাজ এর উজ্জ্বল উদাহরণ। মাগুরা থেকে উঠে এসেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান, দেশের সর্বশেষ দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্ত জেলা ‘ব্যাঘ্রতদ’ খ্যাত সাতক্ষীরা বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে ‘দ্য ফিজ’ মুস্তাফিজুর রহমান এবং সৌম্য সরকারের মতো ক্রিকেটারের।

বাঁ-হাতি কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান এক বছরের কিছু সময় আগে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজের অভিষেকলগ্ন রাঙিয়েছেন দুরন্ত গতির বোলিং দিয়ে। তার আগে জাতীয় দলে অভিষেক হয় অলরাউন্ডার সৌম্য সরকারের। বছরের শেষে এসে আবারও চমক। এই চমকের নাম মেহেদী হাসান মিরাজ। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ডেব্যু টেস্ট সিরিজে ১৯ উইকেট নিয়ে যিনি দেশে-বিদেশে ক্রিকেটবোদ্ধাদের মুগ্ধতা কেড়ে নিয়েছেন। তার ঘূর্ণি জাদুতেই কুপোকাত হয়ে ইংল্যান্ড ঢাকা টেস্টে ধরাশায়ী হয়েছে তিন দিনে।

অভিষেকেই এমন মোহনীয় বোলিং কারিশমা রাতারাতি বদলে দিয়েছে তার পৃথিবী। খুলনার খালিশপুরের হাউজিং স্টেট এলাকার ছেলে মিরাজ এখন বাংলাদেশের সবচেয়ে নন্দিত তরুণ। ইংল্যান্ডের ক্রিকেটবোদ্ধারাও কুর্নিশ জানাচ্ছেন তার বোলিং প্রতিভাকে। স্বর্ণখনির মতো খুলনা যেন খেলোয়াড়দের খনি।

খুলনা বিভাগকে বলা হয় ক্রীড়াবিদদের উর্বরভূমি। নন্দিত ক্রিকেটারদের পাশাপাশি এ অঞ্চল থেকে উঠে এসেছেন অনেক তারকা ফুটবলার, অ্যাথলেট, সাঁতারু ও শুটার। তবে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সবচেয়ে বেশি আলো ছড়িয়েছেন এ অঞ্চলের ক্রিকেটাররা। সাম্প্রতিক সময়ে সব মিলিয়ে খুলনা বিভাগের ১৩-১৪ জন ক্রিকেটার রয়েছেন যারা নিয়মিত জাতীয় দলে খেলছেন বা জাতীয় দলে যাওয়া-আসার মধ্যে আছেন।

অবসরে গেছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও বর্তমান নির্বাচক মি. ফিফটিখ্যাত কুষ্টিয়ার হাবিবুল বাশার। যশোরের সৈয়দ রাসেলের অলিখিত অবসর হয়ে গেছে। আবদুর রাজ্জাক ঘরোয়া ক্রিকেটে এখনও আলো ছড়াচ্ছেন। এ অঞ্চল থেকে আরও উঠে এসেছেন যশোরের তুষার ইমরান, মেহেরপুরের ইমরুল কায়েস, মাগুরার সাকিব আল হাসান, বাগেরহাটের রুবেল হোসেন, সাতক্ষীরার রবিউল ইসলাম শিবলু, ঝিনাইদহের আল-আমিন হোসেন ও কুষ্টিয়ার এনামুল হক বিজয়। এ বছর যোগ হল আরও দুটি নাম। খুলনার নূরুল হাসান সোহান ও মেহেদী হাসান মিরাজ। কী জাদু আছে বৃহত্তর খুলনা অঞ্চলের মাটিতে যে, এখান থেকে এমন প্রতিভাধর খেলোয়াড় উঠে আসে!

বর্তমানে অন্যতম নির্বাচক হাবিবুল বাশার সুমন মনে করেন, ‘এ নিয়ে গবেষণা করা যেতে পারে।’ কোচ সরওয়ার ইমরানের ধারণা, এই অঞ্চলের মানুষ ক্রীড়াপ্রেমী।

সরওয়ার ইমরান বলেন, ‘বিশেষ কোনো কারণ বলা কঠিন। আমার যেটা মনে হয়, এই অঞ্চলের ছেলেরা খেলার প্রতি বেশি আগ্রহী। এখানকার ছেলেদের মানসিকতা অনেক শক্ত। শারীরিকভাবেও তারা বেশি ফিট। অন্য কোনো কারণও থাকতে পারে। এ অঞ্চলের কোচরা হয়তো অনেক ভালো। এখানকার সংগঠকরা দক্ষ এবং নিবেদিতপ্রাণ হতে পারেন। এছাড়া পরিবেশটাও বড় একটা পার্থক্য গড়ে দেয়।’

সাবেক অধিনায়ক হাবিবুল বাশার বলেন, ‘খুলনা বিভাগ থেকে এত ক্রিকেটার কেন উঠে আসে এটা গবেষণার বিষয় হতে পারে। এত ছোট একটা দেশ, সেখানেও নির্দিষ্ট একটি অঞ্চলের ছেলেরা জাতীয় দলে দাপটের সঙ্গে খেলে যাচ্ছে। তা-ও ধারাবাহিকভাবে। এই অঞ্চলের মাটিও হয়তো খেলোয়াড়দের উপযোগী। খুলনা ক্রিকেটের আত্মা। ক্রিকেটার তৈরির অনেক কারণ থাকতে পারে। এখানকার মাঠে ছেলেরা অনেক বেশি ক্রিকেট খেলে। খেলায় তারা হয়তো বেশি সময় দেয়। শুধুই যে খেলোয়াড় উঠে আসে তা কিন্তু নয়, সবাই ভালোমানের এবং দীর্ঘদিন জাতীয় দলে খেলার পণ করেই আসে।’

এ অঞ্চলের সর্বশেষ ক্রেজ মেহেদী হাসান মিরাজ আপাতত এ নিয়ে বিশ্লেষণে যেতে চাইলেন না। কীভাবে জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পথ তৈরি করলেন জানতে চাইলে মিরাজ বলেন, ‘আমার লক্ষ্যই ছিল ক্রিকেটার হওয়া।’

মাশরাফি বলেছেন, ‘মানসিকতাই এই অঞ্চলের খেলোয়াড়দের ক্রিকেটার বানিয়ে তোলে।’

যশোরের কিউরেটর জাহিদ রেজা বাবু এবার চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ উইকেট বানিয়ে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এই অঞ্চলের খেলোয়াড়দের মধ্যে বোলারই বেশি। বিশেষ করে পেস বোলার। এখানে একটা ধারাবাহিকতা এসে গেছে। তারকাদের অনুসরণ করতে পছন্দ করে তারা। একজনকে দেখে আরেকজন পেসার হতে চায়। যেমন মাশরাফি পেসার হওয়ার পর অনেকেই এসেছে। ডলার মাহমুদ, সৈয়দ রাসেল, রুবেল হোসেন, আল-আমিন, মুস্তাফিজসহ অনেকেই। এখানকার ছেলেরা পরিশ্রমী। তাদের একটা লক্ষ্য স্থির হয়ে গেছে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে মাটির কোনো গুণ রয়েছে এমন কথা আমি বলব না। বরং এখানকার ছেলেরা সুযোগ-সুবিধা কম পায়। প্রকৃতিগতভাবেই সুইং পায় এরা। কেউ ভালো করলে ছেলেরা তাকে অনুসরণ করে। সৌম্য ব্যাটিংয়ে ভালো করলে হয়তো আরও ব্যাটসম্যান উঠে আসবে এখান থেকে।’

সাংগঠনিক দক্ষতার কথাও তুলে ধরলেন তিনি। জাহিদ রেজা বলেন, ‘এখানকার সংগঠকরা ইতিবাচক। তারা তাদের ছেলেদের জাতীয় দলে দেখতে চান। এবার ঢাকা লীগে মোহামেডানের হয়ে যশোরের হাসানুজ্জামান ঝড়ো ব্যাটিং করেছে। আশা করি, তার মতো আরও ব্যাটসম্যান উঠে আসবে এখান থেকে।’

সূত্র: যুগান্তর

Post a Comment

Thenks for your comments.

Contact Form

Name

Email *

Message *

Powered by Blogger.
Javascript DisablePlease Enable Javascript To See All Widget